খুব রোমান্টিক গল্প
এই মুহূর্তে ট্রেন নেই, বাসও নেই ডিরেক্ট। ব্রেক করে করে যেতে হবে। তেমনি চড়া রোদ। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই, যেতেই হবে। কী ভীমরতি যে ধরেছিলো কালকে। নিজেকে নিজে বকতে বকতেই যে বাসটা এলো তাতে চেপে বসলো মুকুলিকা, ঠিকঠাক গেলে দুপুর একটার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবে।
কিন্তু বিধি বাম হলে যা হয় আর কি, ঠিক শহরে ঢোকার আগে বাসের একটা চাকা হয়ে গেলো পাংচার। আর এমন জায়গায় যেখান থেকে আর কিচ্ছু পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। ও যখন ভয়ানক অস্থির হয়ে উঠেছে তখন হঠাৎ করেই যেন ঈশ্বরের দূত হয়ে এলেন এক অটোর দাদা। ওদের কলেজের রুটেই ওনার যাতায়াত তাই মুখ চেনা চেনে মুকুলিকার, বহুবার ওর অটো করে ওরা হস্টেল থেকে কলেজ বা কলেজ থেকে হস্টেল এসেছে। কিন্তু ওর বাড়ি এদিকে হওয়ায় এখন এদিক থেকে যাচ্ছে।
মুকুলিকা তো যেন হাতে চাঁদ পেলো। চুপ করে উঠে বসে পড়লো অটোতে। সকাল থেকে দৌড় ঝাঁপ, ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবে কিনা তার টেনশন, বেরোবার সময়ে তাড়াতাড়িতে প্রায় কিছু না খেতে পারায় প্রায় খালি পেট, সবকিছু মিলিয়ে বেশ কাবু করে ফেলেছে ওকে। মাথাটা মাঝে মধ্যেই হালকা টাল মাটাল হয়ে যাচ্ছে, এই অবস্থায় চোখ বন্ধ করলো মুকুলিকা।
দিদিভাই চলে এসেছি, অটো দাদার ডাকে চোখ খুলে মুকুলিকা দেখে ওরা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে, ঘড়ি বলছে তখন প্রায় দেড়টা। অটো দাদাকে ভাড়া মিটিয়ে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রায় দৌড়ে অফিসে এসে দেখে টিফিন টাইম শুরু হয়ে গিয়েছে। সবাই এক একটা গ্রুপ করে করে ভাগাভাগি করে এ ওর টিফিন খাচ্ছেন, সবার মুখেই এক শান্তির হাসি। ঠিক এই সময়টাতে সবাই প্রায় সাংসারিক জ্বালা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়, তাই এই সময়টায় আর কাওকে বিরক্ত করতে মন চাইলো না মুকুলিকার।
কিন্তু ও না চাইলে কী হবে, দু মিনিটের মধ্যেই সবাই প্রায় দেখে ফেললো ওকে, কারণ যখন থেকে অফিসের কাজ শুরু হয়েছে তখন থেকে তো সবার চোখ ওকেই খুঁজছে। একটার পর একটা ভালো ভালো সংস্থার সিট যখন ভর্তি হয়ে যাচ্ছে, তখন তো গুঞ্জনে কান পাতলে একটা কথাই শোনা যাচ্ছে, মুকুলিকা কোথায়? কারণ সবাই চায় একটা ভালো জায়গায় যেন যেতে পারে ও। আর তাই সুধীর দা তাড়াতাড়ি করে টিফিন বক্স গুছিয়ে ওকে ডাকেন ওনার টেবিলে।
প্রথমে তো এক প্রস্থ বকুনি খেতেই হবে, জানাই ছিলো মুকুলিকার। আর তাই হলো ।কিন্তু তার সঙ্গে জুটলো একটা মিষ্টি আর এক গ্লাস জল, যেটা এই মুহূর্তে সত্যিই খুব দরকার ছিলো ওর।
শোনো মুকুলিকা, নাম করা চেনা সংস্থা গুলোতে একটাও সিট আর খালি নেই। কিন্তু তাতে মনে হয় তোমার শাপে বর হয়েছে। একটা নতুন সংস্থা, নাম জানেনা তোমাদের মতো স্টুডেন্টরা। কিন্তু যারা এই লাইনে আছে তারাই জানে, কীভাবে তড়তড় করে উঠছে ওর গ্রাফ। ওরা একজনকেই নেবে, তাই তোমার কথা ভেবেই কাওকে কিছু বলিনি ওর সম্বন্ধে। তুমি যাও, দেখবে খারাপ লাগবে না।
আর তো কিছু করারও নেই, অগত্যা সব ফরমালিটিস পূর্ণ করে হস্টেলে ফিরে আসে মুকুলিকা সৌমি, বনানীদের সঙ্গে, যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো এতক্ষণ ধরে ওর জন্যে অফিসের বাইরে ।
অফিসিয়ালি হস্টেল ছেড়ে দেওয়ার কথা ওদের, কিন্তু আরো ছ টা মাস ওদের থাকতে দেবে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ইন্টার্নশিপের জন্য। তাই আরও ছ মাস রাতটুকু তো পাবে একে অপরের সঙ্গ, এই ভেবেই বেশ খুশি ওদের মন ।