বাবার সাথে শপিং করতে গিয়ে একটা ছেলের দিকে চোখ আটকে যায় তানহার। শপিংমলের বাইরে একটা গাছের নিচে বসে আছে চাপ দাঁড়ি ওয়ালা একটা সুদর্শন ছেলে। তানহা হা করে তাকিয়ে আছে।
“কি রে দাঁড়িয়ে গেলি যে চল মন খারাপ করে বাবার সাথে শপিং মলে ঢুকে তানহা। তারাহুরো করে অল্প কিছু শপিং করে বের হয়। কিন্তু ছেলেটা নেই। এটুকু সময়ের মধ্যে কোথায় গেলো? তানহা চারদিকে খুঁজে। “কাউকে না ” চল তাহলে বাবার সাথে বাড়ি চলে আসে তানহা। মাথার মধ্যে সব সময় ওই ছেলের কথা ভাসছে। নামটাও জানা নেই। নিজের রুমে এসে ফোনটা হাতে নেয়। আবোলতাবোল অনেক নাম দিয়ে সার্চ দেয় কিন্তু ছেলেটার আইডি পায় না। মন খারাপ করে বসে থাকে তানহা। পরের দিন আবার তানহা শপিংমলে যায় সেি গাছের নিচে বসে থাকে কিছুখন। আশেপাশের মানুষকে ছেলেটার কথা জিজ্ঞেস করে কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না। এভাবেই এক মাস কেটে যায়। ভার্সিটি রাস্তা ঘাট সব জায়গায় ছেলেটাকে খুঁজে তানহা। কিন্তু আর তার দেখা মিলে না। আজ তানহা তানহার বোন তোহা আর তানহার বাবা বের হচ্ছে। উদ্দেশ্য তোহাকে কলেজে ভর্তি করাতে যাবে। তোহাকে ভর্তি করাতে গিয়ে অফিস রুমে আবার সেই ছেলেটাকে দেখতে পায় তানহা। তানহার খুশি দেখে কে। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। ছেলেটা তোহার কলেজের স্যার। নাম নাহিদ। তানহা তো চোখ ফেরানোর প্রয়োজনই মনে করছে না। নাহিদ তানহাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু বিরক্ত হয়। কিন্তু তানহার সেদিকে খেয়াল নেই। “আপি চলো তোহার কথায় তানহা চোখ সরিয়ে নেয়। ” আমি কি আপনার ফেসবুক আইডিটা জানতে পারি তানহার কথায় তানহার বাবা তোহা আর নাহিদ তিনজনই অবাক। নাহিদের একটু রাগও হয় “হোয়াট ” প্লিজ না করবেন? জাস্ট আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে একটু জায়গা চায়। প্লিজ প্লিজ প্লিজ “নাহিদ মাহমুদ তানহা তখনই সার্চ দেয় আর পেয়ে যায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয়। ” এক্সেপ্ট করেন ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও নাহিদ রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। তানহা হাসি মুখে বাই বলে চলে যায়। তানহার এমন বিহেবের জন্য তানহার বাবা হাজারটা বকা দেয়। মুখ বুজে হজম করে নেয় তানহা। রাতে তানহা পাঁচটা মেসেজ দেয় নাহিদ কে সিন করে বাট রিপ্লাই দেয় না। রাগ হয় তানহার। যদি বিজি থাকো তো সিন করো কেনো? সকাল সকাল তানহা বেরিয়ে যায়। তোহার কলেজে যাবে। নাহিদ কেনো রিপ্লাই দিলো না জানতে। কলেজে পৌঁছে যায়। নাহিদ অফিস রুমে বসে ছিলো তানহা ঢুকে পরে “আমার মেসেজের রিপ্লাই কেনো দেন না। নাহিদ ফাইল চেক করছিলো তানহার কথায় মাথা তুলে তানহার দিকে তাকায়। ” আমার ইচ্ছে হয় নাই তাই দেই নি “কেনো ইচ্ছে হবে না? আমি জাস্ট জানতে চেয়েছি কেমন আছেন? ” আমি অলওয়েজ ভালো থাকি “এমন কেনো আপনি ” আমি এমনি তানহা এবার নাহিদের কাছে গিয়ে কলার চেপে ধরে বলে “আমার মেসেজের রিপ্লাই না দিলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। হনহন করে চলে যায় তানহা। নাহিদ মুখটা কালো করে বসে থাকে। আবার রাতে তানহা নাহিদকে মেসেজ করে নাহিদ সাথে সাথে রিপ্লাই দেন। এভাবেই দিন কাটতে থাকে। নাহিদের সাথে তানহা প্রতিদিন রাতে কথা হয়। আর তানহা প্রতিদিন নাহিদের কলেজে যায় নাহিদকে দেখতে। আজ তানহা অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা হলো নাহিদকে প্রপোজ করবে। একটা পার্কে ডাকে নাহিদকে। তানহার আগেই নাহিদ পার্কে চলে আসে। তানহা এসে দেখে নাহিদ বসে আছে ” এই লোকটা সব সময় বসে থাকে কেনো? তানহা আজ লাল একটা শাড়ি পরে এসেছে। তানহা নাহিদের পাশে বসে। একগুচ্ছ ফুল নাহিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে “ভালোবাসি আপনাকে। আপনার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই। আপনার ছায়া হতে চাই। আমার ভালোবাসার রং এ আপনাকে রাঙাতে চায়। আপনি কি আমার হাতটা ধরবেন? নাহিদ তানহার কাছে থেকে ফুল নিয়ে বলে ” চলে যাও তানহা। আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না। “কেনো? আমার পবলেম কোথায়? ” তোমার কোনো পবলেম নেই কিন্তু আমার আছে তানহা উঠে দাড়িয়ে বলে “মানে নাহিদ পেছন থেকে দুটো লাঠি বের করে তাতে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। তানহা দুপা পিছিয়ে যায়। “আমার একটা পা অকেজো। লাঠি ছাড়া হাটতে পারি না। তাই সারাক্ষণ বসে থাকি। তুমি চলে যাও তানহা। তানহা নাহিদের পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। পাটা ভিষণ চেকুন। তানহার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। ” ভালো আমিও তোমাকে বাসি তানহা। কিন্তু আমি তো হাটতে পারি না। আমি তো তোমার যোগ্য না। তোমাকে কখনো ভালো রাখতে পারবো না। অনেক ভালো কাউকে পাবে তুমি। অনেক ভালো থাকবে নাহিদ দুফোঁটা চোখের পানি মুছে চলে যেতে নেয় তানহা নাহিদকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। “আপনার পা আছে কি নেই আপনি হাঁটতে পারে কি না এতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। জাস্ট পায়ের জন্য আপনাকে ছেড়ে দেবো ভাবলেন কি করে। আমার তো পা আছে তাতেই হবে। নাহিদ ঘুরে তানহাকে জড়িয়ে কান্না করে। এতো সুন্দর এতো পারফেক্ট একটা কিন্তু একটা পা নেই ভাবা যায়। তানহা বাড়িতে এসে বাবা কে বলে নাহিদকে বিয়ে করবে। কিন্তু কেউ রাজি হয় না। ওরকম একটা ছেলের হাতে কিছুতেই তারা তাদের মেয়েকে বিয়ে দেবে না। তানহা বুঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত। সবশেষে সিদ্ধান্ত নেই পালিয়ে যাবে। নাহিদ প্রথমে রাজি হয় না কিন্তু পরে তানহার জোরাজুরিতে রাজি হয়ে যায়। ইয়া বড় একটা লাগেজ নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। নাহিদ একটা সিএনজি নিয়ে আসে। তানহা তাতে বসে ” তানহা কাজটা মনে হয় ঠিক হলো না “একদম ঠিক হয়েছে। ভালোবাসি আপনাকে বিয়ে করবো অন্য কাউকে ” বাবাকে ভালো করে বুঝার পারতে “চেষ্টা করেছি কাজ হয় নি নাহিদ তানহাকে নিয়ে নাহিদদের বাড়িতে আসে। নাহিদের মা আর বাবা আছে। বাড়িটা ছোট। বাবা মায়ের সম্মতি নিয়ে নাহিদ তানহা বিয়ে করে নেয়। শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। তানহাকে রান্না করতে দেয় নাহিদের মা। তানহা তো রান্না করতে পারে না। নাহিদ হেল্প করে। নাহিদদের বাড়িতে গোছলখানাও নেই পুকুরে গোছল করতে হয়। নাহিদ কলেজ থেকে যা বেতন পায় তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলে। প্রতিদিন সকালে উঠে রান্নাবারা বাসনকোশন মাজা সহ সব কাজ করতে হয় তানহার জীবনে এসব করতে হয় নি। কিন্তু এখন করতে হচ্ছে। সারাদিন খেটেখুটে সন্ধায় একটু রেস্ট নেওয়ার সময় পায় তানহা। রুমে বসে আছে তানহা। ফোনটা নাহিদকে দিয়ে দিয়েছে। নাহিদের ফোন নষ্ট হয়ে গেছে নতুন ফোম কেনার টানা নেই তাই তানহা তানহার ফোনটা নাহিদকে দিয়ে দিয়েছে। ” মাথায় কারো হাতের স্পর্শে তাকায় তানহা। দেখে নাহিদ তানহার মাথায় ফুলের গাজরা দিচ্ছে। তানহা একটু মুচকি হাসে “তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না তানহা। কি করবো বলো আমার সামর্থ্য নেই একটা কাজের লোক রাখার। মাও কাজ করতে পারে না। যখন তুমি ছিলেনা আমি বাসায় এসে এসব করতাম। আর তুমি এতো কেনো করো আমি বাসায় এসে করে নেবো।